আটকে থাকা পিরিয়ড শুরু করার উপায়: ওষুধ ছাড়াই পান তাৎক্ষণিক সমাধান!

মাসিক চক্র বা পিরিয়ড নারীদের একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তবে, বিভিন্ন কারণে কখনও কখনও পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে কিংবা একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় পিরিয়ড দেরিতে শুরু হওয়া চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে যখন কেউ সক্রিয় যৌনজীবনে জড়িত থাকেন। আটকে থাকা পিরিয়ড দ্রুত শুরু করতে কিছু নিরাপদ উপায় রয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা আটকে থাকা পিরিয়ড শুরু করার উপায় গুলো নিয়ে আলোচনা করব। তবে তার আগে, পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে সেসব কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।

আটকে থাকা পিরিয়ড শুরু করার উপায়

আটকে থাকা পিরিয়ড শুরু করার উপায়

পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার কারণ বা পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণ

  • গর্ভধারণ: পিরিয়ড দেরিতে হওয়া বা বন্ধ হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল গর্ভধারণ। আপনার মনে হলো যে আপনি গর্ভবতী হতে পারেন, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিন।


  • চাপ ও মানসিক অবস্থা: অত্যধিক চাপ বা মানসিক অশান্তি হরমোনের মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে। আর হরমোনজনিত সমস্যার কারণে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে।


  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: শরীরের বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা পিরিয়ড দেরিতে হওয়া বা বন্ধ হওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ।


  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) নারীদের একটি হরমোনজনিত সমস্যা। পিসিওএস-এর অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল অনিয়মিত পিরিয়ড অথবা পিরিয়ডের দীর্ঘ অনুপস্থিতি।


  • ওজনের হঠাৎ পরিবর্তন: হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়াও পিরিয়ডের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।


  • থাইরয়েডের সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনও নারীদের মাসিকচক্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপারথাইরয়েডিজম উভয়ই পিরিয়ডকে অনিয়মিত করে দিতে পারে।


  • অতিরিক্ত শরীরচর্চা: অত্যধিক শরীরচর্চা করলে হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে। যার ফলে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে।


  • নির্দিষ্ট ওষুধের প্রভাব: কিছু কিছু ওষুধ, যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ মাসিকচক্রের উপর প্রভাব ফেলে দেরিতে শুরু করাতে পারে।

তাড়াতাড়ি মাসিক হওয়ার ঘরোয়া উপায়

পিরিয়ড দেরিতে হওয়া বা আটকে থাকলে, আটকে থাকা পিরিয়ড শুরু করার উপায় হিসেবে আপনি বাসাতেই কিছু প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করতে পারেন।


  • ভিটামিন সি: ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার পিরিয়ড শুরু করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি জরায়ুর আবরণকে পাতলা হতে সহায়তা করে এবং এর সংকোচনে ভূমিকা রাখে। এজন্য কমলা, লেবু, পেঁপে, আনারস, ব্রকলি ইত্যাদি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন।


  • আদা: আদা পিরিয়ড চালু করতে বেশ কার্যকরী। চা কিংবা স্যুপের সাথে মিশিয়ে আদা খেতে পারেন। আদা পিরিয়ডের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা তৈরি করতে সাহায্য করে।


  • হলুদ: হলুদ একটি উষ্ণ মসলা যা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং পিরিয়ডের প্রবাহ শুরু করতে পারে। দিনে দুবার পানিতে এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন।


  • তিল: তিলের বীজ পিরিয়ড শুরু করার জন্য বেশ কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। আপনার মাসিকচক্র নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিদিন এক মুঠো তিল খান।


  • মেথি: মেথিও তিলের মতই পিরিয়ড শুরু করতে দারুণভাবে সাহায্য করে। এক চা চামচ মেথির বীজ পানিতে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন। পরদিন সকালে সেই পানি ছেঁকে বীজগুলো ফেলে দিয়ে খালি পেটে খেয়ে নিন।


  • পেঁপে: কাঁচা পেঁপে খেলেও পিরিয়ড দ্রুত শুরু করা সম্ভব।  এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যারোটিন রয়েছে, যা ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। পেঁপেতে ভিটামিন সি-ও রয়েছে যা পিরিয়ডের চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। আপনি প্রতিদিন এক বা দুই বাটি কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন।


  • যৌন মিলন: যৌনক্রিয়া শরীরে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসরণ করে, যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে যা পিরিয়ড শুরু করতে সহায়ক হতে পারে।


  • শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা: নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আপনি যদি স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করেন এবং নিয়মিতভাবে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকেন, তবে আপনার মাসিক চক্র নিয়মিত থাকার সম্ভাবনা বেশি।

ওষুধের মাধ্যমে পিরিয়ড নিয়মিতকরণ বা পিরিয়ড হওয়ার ঔষধ

পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার যদি কোনো চিকিৎসাগত কারণ থাকে, তাহলে আটকে থাকা পিরিয়ড শুরু করার উপায় হিসেবে আপনার চিকিৎসক আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ দিতে পারেন। পিরিয়ড নিয়মিত করার জন্য চিকিৎসক বিভিন্ন ওষুধের মধ্যে বার্থ কন্ট্রোল পিল, হরমোনজনিত ওষুধ অথবা অন্যান্য ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন।

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখলে পিরিয়ড নিয়মিত হতে সাহায্য করে। যদি চাপের কারণে আপনার পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়, তবে আটকে থাকা পিরিয়ড শুরু করার উপায় হিসেবে চাপ কমাতে আপনাকে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।


  • স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন: স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত পিরিয়ড চালু করতে এটি সহায়ক হতে পারে।

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম: পর্যাপ্ত বিশ্রাম শুধু শরীরিক সুস্থতার জন্যই নয়, এটি পিরিয়ড নিয়মিতকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কখন ঘুমাবেন, কখন ঘুম থেকে উঠবেন সেই রুটিনটা ঠিক রাখা প্রয়োজন।

  • চাপ নিয়ন্ত্রণ: অত্যধিক চাপের কারণেও পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, হাঁটাচলা ইত্যাদির মাধ্যমে চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

আপনি যদি মনে করেন যে, উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়া অন্য কোনো কারণে আপনার পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেছে, তাহলে আটকে থাকা পিরিয়ড শুরু করার উপায় হিসেবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যদি পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার সাথে সাথে আপনার নিম্নোক্ত উপসর্গগুলোর অভিজ্ঞতা হয় তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন:


  • অত্যধিক মাত্রায় অথবা দীর্ঘ সময় ধরে রক্তক্ষরণ

  • পেটে তীব্র ব্যথা

  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

  • অতিরিক্ত দুর্বল বোধ করা

  • জ্বর ইত্যাদি।

FAQs

প্রশ্নঃ পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত? 

উত্তরঃ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, আদা, হলুদ, তিল, মেথি ইত্যাদি খাওয়া পিরিয়ড শুরু করতে সাহায্য করতে পারে।

প্রশ্নঃ পিরিয়ড চালু করার জন্য সহবাস কি করা উচিত?

উত্তরঃ হ্যাঁ, অনেক সময় সহবাস পিরিয়ড শুরু হওয়ার প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

প্রশ্নঃ অনিয়মিত পিরিয়ড কি গর্ভধারণের বাধা সৃষ্টি করে? 

উত্তরঃ অনিয়মিত পিরিয়ড গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণে কখন আপনার ওভুলেশন হবে, তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে আপনি কখন সবচেয়ে বেশি ফার্টাইল তা বুঝতে পারেন না।

প্রশ্নঃ পিরিয়ড দেরিতে হয় কেন? 

উত্তরঃ গর্ভাবস্থা, চাপ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS), থাইরয়েডের সমস্যা, ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি, এবং অতিরিক্ত ব্যায়াম পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার প্রধান কারণসমূহ।

প্রশ্নঃ পিরিয়ড কত দিনের মধ্যে হওয়া উচিত? 

উত্তরঃ সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পিরিয়ড হওয়া উচিত। তবে চক্রের সময়সীমা নারীভেদে আলাদা হতে পারে। প্রতি ২৮ দিনে পিরিয়ড হওয়াটাই স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হয়।

উপসংহার

পিরিয়ড দেরিতে হওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ঘরোয়া উপায় এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে আপনার যদি মনে হয় পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার জন্য কোনো মারাত্মক সমস্যা হয়েছে, অথবা যদি কোনোরকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন, তাহলে আটকে থাকা পিরিয়ড শুরু করার উপায় এর জন্য অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।




দাবী পরিত্যাগ (Disclaimer): উপরে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে। এটি কোনোভাবেই পেশাদার চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প হতে পারে না। যেকোনো চিকিৎসা শুরু করার আগে দয়া করে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url