খাবার খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত? সঠিক সময় জেনে নিন

সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপনের জন্য শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু খাবার খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত, সেটি নিয়ে বিভ্রান্তি থাকতে পারে। অনেকেই ব্যায়ামের উপযুক্ত সময়, খাওয়ার পরিমাণ, এবং খাবারের ধরন নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। আসলে, সঠিক সময়ে ও সঠিক পদ্ধতিতে ব্যায়ামের আগে বা পরে খাওয়া আপনার শরীরটাকে চাঙ্গা রাখতে এবং ব্যায়ামের সুফল পেতে সাহায্য করতে পারে। আসুন খাবার খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত সে সম্পর্কে কিছু নির্দেশিকা এবং টিপস নিয়ে আলোচনা করি।

খাবার খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত

ব্যায়ামের জন্য খাবার খাওয়ার গুরুত্ব

শারীরিক পরিশ্রমের জন্য আমাদের শরীরকে শক্তির প্রয়োজন হয়। এই শক্তি প্রধানত খাবার থেকে আসে। ব্যায়ামের আগে সঠিক খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি:

  • শক্তির উৎস: কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার আপনার শরীরকে ইন্ধন হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা দেয় এবং ক্লান্তিভাব রোধ করে।
  • ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ ও মনোযোগ বৃদ্ধি: ব্যায়ামের সময় ক্ষুধা আপনার মনোযোগ নষ্ট করে দিতে পারে। ব্যায়ামের আগে কিছু খাওয়া, ক্ষুধার সমস্যা দূর করে আপনাকে ব্যায়ামের ওপর মনোযোগ রাখতে সাহায্য করে।
  • পুষ্টির যোগান: ব্যায়ামের পরে পেশীগুলো সুস্থ হতে পুষ্টির প্রয়োজন হয়। ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া করা এই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

কেন খাবারের পরপরই ব্যায়াম করা উচিত নয়?

খাবার খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত এই বিষয় নিয়ে বলতে গেলে খাবারের পরপরই ব্যায়াম করার বিরুদ্ধে যুক্তি রয়েছে। এখানে কয়েকটি মূল কারণ রয়েছে:

  • পাচনতন্ত্রে খাবারের প্রভাব: খাবার খাওয়ার পরে, আপনার শরীর পাচন প্রক্রিয়া শুরু করে। এতে পাচনতন্ত্রে পাকস্থলী এবং অন্ত্রের দিকে রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধি জড়িত। ব্যায়ামও একইভাবে আপনার পেশী থেকে রক্ত ​​প্রবাহ বাড়ায়। এই প্রতিযোগিতামূলক রক্ত ​​প্রবাহের চাহিদা হজমকে বাধা দিতে পারে এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  • রক্ত ​​প্রবাহ এবং ব্যায়ামের প্রভাব: ব্যায়ামের সময়, আপনার রক্ত ​​প্রবাহ হজমের মতো অপরিহার্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরে যায় এবং সক্রিয় পেশীগুলিতে বিতরণ করা হয়। এই অস্থায়ী রক্তপাত হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে, যার ফলে সম্ভাব্য অস্বস্তি হয়।
  • বমি বমি ভাব বা অস্বস্তির ঝুঁকি: খাবারের পর খুব তাড়াতাড়ি জোরালো ব্যায়াম করা বমি বমি ভাব, খিঁচুনি এবং সামগ্রিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। আপনার হজমের অঙ্গগুলিতে খাবারের চাপের সাথে যুক্ত শারীরিক পরিশ্রম এই অপ্রীতিকর উপসর্গগুলির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আমাদের আরো পোস্ট পড়ুন: অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার হোমিও ঔষধ

 ব্যায়াম করার আগে ও পরে কি খাওয়া উচিত?

খাবারের পরিমাণ ও ধরন আপনার ব্যায়ামের সময়টিকে প্রভাবিত করতে পারে। আপনি যদি নিচের সময়সীমা অনুসরণ করেন, তাহলে খাবার হজমের সমস্যা এড়াতে পারবেন:

  • ব্যায়ামের আগে খাবার: ব্যায়ামের ৩০-৬০ মিনিট আগে সহজে হজম হতে পারে এমন কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ কিছু খাওয়া ভালো। এরমধ্যে থাকতে পারে ওটস, ব্রাউন রাইস, বাটাটা, পাস্তা, ফল ইত্যাদি।
  • ব্যায়ামের সময় খাবার: আপনি যদি এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করেন, তাহলে কিছু হালকা খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে। কলা, শুকনো ফল, জেলি বা স্পোর্টস ড্রিংক্স শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে।
  • ব্যায়ামের পরে খাবার: কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের ভারসাম্যপূর্ণ খাবার পেশী পুনরুদ্ধারে কাজ করে। দুধ, ডিম, চিকেন, স্যামন মাছ, কুইনোয়া, শাক-সবজি, ইত্যাদি ভালো উৎস।

খালি পেটে ব্যায়াম করার সুবিধা

খালি পেটে ব্যায়াম করার কিছু সুবিধাও রয়েছে:

  • রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ: খালি পেটে ব্যায়াম করলে আপনার শরীর রক্তে শর্করা সঞ্চয় করার পরিবর্তে চর্বি পোড়াতে পারে, যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
  • চর্বি পোড়ানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি: সকালে খালি পেটে করা হালকা কার্ডিও, গবেষণা অনুসারে, দিনের বাকি সময়ে চর্বি পোড়ানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে।
  • মানসিক সতর্কতা: কিছু লোক মনে করেন যে খালি পেটে ব্যায়াম করলে সারা দিন ধরে তাদের মানসিক সতর্কতা এবং ফোকাস বাড়ে।

অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়

  • স্বাস্থ্যগত অবস্থা: আপনার যদি ডায়াবেটিস, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, বা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে ব্যায়ামের আগে বা পরে খাওয়ার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া-দাওয়ার সময়সূচি ঠিক করে নিন।
  • গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) সম্পর্কিত সমস্যা: আপনার যদি GERD থাকে, তবে খাবারের পর খুব তাড়াতাড়ি ব্যায়াম না করাই ভালো। আপনার খাবার হজম করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিন, এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণগুলি কমানোর জন্য আপনার মাথা উঁচু করে ঘুমান।
  • ব্যায়ামের ধরন ও তীব্রতা: দীর্ঘস্থায়ী, মধ্যম মাত্রার কার্ডিও ব্যায়ামের জন্য ব্যায়ামের আগে নাস্তা করাই যথেষ্ট। কিন্তু আপনি শক্তি প্রশিক্ষণ (ওয়েট লিফটিং) করতে চাইলে, বড় খাবার খেয়ে অন্তত ২-৩ ঘণ্টা পরে ব্যায়াম করা উচিত।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১. খালি পেটে ব্যায়াম করা কি নিরাপদ?

হালকা বা সংক্ষিপ্ত ব্যায়াম খালি পেটে করা যেতে পারে, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর। তবে দীর্ঘ বা তীব্র ব্যায়ামের আগে কিছু খেয়ে নেওয়া ভালো। ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার সমস্যা থাকলে খালি পেটে ব্যায়াম এড়ানো উচিত।

২. যদি আমি ব্যায়াম করার আগে ভারী খাবার খেয়ে ফেলি তাহলে কি হবে?

ভারী খাবার খাওয়ার পরে ব্যায়াম করলে বমি ভাব, পেটে শিরটান, বা হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই, ভারী খাবারের পর অন্তত কয়েক ঘণ্টা ব্যায়াম না করাই ভালো।

৩. ব্যায়ামের পরে কতক্ষণ অপেক্ষা করে খাবার খাওয়া উচিত?

ব্যায়াম শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আপনি খাবার খেতে পারেন। তবে ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন যাতে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে।

৪. রাতে খাওয়ার পরে ব্যায়াম করা কি ভালো?

রাতে খাবার খেয়ে পরপরই ব্যায়াম করা এড়ান। ব্যায়াম হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে। খাওয়ার অন্তত দুই-তিন ঘণ্টা পরে ব্যায়াম করা ভাল।

৫. ব্যায়ামের আগে ও পরে পানি পান করা কি জরুরি?

হ্যাঁ, ব্যায়ামের আগে, সময়, এবং পরে প্রচুর পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে হাইড্রেটেড রাখবে, শিরটান এবং ক্লান্তি প্রতিরোধ করবে, এবং আপনার ফিটনেসের উপকারগুলো সর্বাধিক করবে।

উপসংহার (খাবার খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত)

খাবার খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত হবে তা নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ, ফিটনেসের লক্ষ্য, এবং শরীরের প্রতিক্রিয়ার উপর। নিজের শরীরের কথা শুনুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ ও সময়সূচী সামঞ্জস্য করুন। তবে, সুস্থ থাকার সর্বোত্তম উপায় হলো ভারসাম্যপূর্ণ খাবার নিয়মিত খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তোলা।




গুগল নিউজে আমাদের ওয়েবসাইট দেখুনঃ গুগল নিউজ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url